খুলনার ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ভোট আগামী ২০ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের সময় যতই কাছে আসছে, ততই প্রচার-প্রচারণা ও উত্তেজনা বাড়ছে। ঘটছে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা। ভোটের মাঠ দখল রাখতে ও জয় ছিনিয়ে নিতে সহিংস হয়ে উঠছে প্রতিপক্ষ। হামলা-পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। এই নির্বাচনে খুলনায় দলীয়ভাবে কোন প্রার্থী দেয়নি বিএনপি।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীসহ একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী। যদিও খুলনায় ইউপি নির্বাচনে ১১ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে আওয়ামী লীগ। যে সব নেতাকর্মী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ও নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করছে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) নির্বাচনী সহিংসতায় জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নে দু’পক্ষের অন্তত ৪ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফারহানা হালিম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া গাজীর সমর্থকদের মধ্যে ওই দিন দুপুরে সেনহাটি পুলিশ ক্যাম্পের সামনে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ ও হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা। কয়েকটি বাড়ি ও চায়ের দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তোজনা বিরাজ করায় এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফারহানা হালিম বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজীকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় আসামি জ্ঞাত ৫১ জন, অজ্ঞাত ৫/৬ জন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ জন। অপরদিকে, শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরপুর ইউনিয়নের সৈয়দের মোড়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়রুল ইসলাম খান জনিসহ ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। এছাড়া কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের পোস্টার টানানো ও প্রচারণার সময় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছের আলী মোড়লের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নৌকার প্রচার মাইক ভাংচুরে বাধা দিলে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয় ৮ জন।
দাকোপের দু’টি ইউনিয়নে নৌকা ও আনারস সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৃথক দু’টি ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। নিরুত্তাপ নির্বাচনে ক্রমেই মিলছে উত্তেজনার আভাস। এর মধ্যে ১নং পানখালী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ সাব্বির আহম্মেদের আনারস প্রতীকের সমর্থক লক্ষিখোলা গ্রামের মফিদুল শেখ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ২নং দাকোপ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সঞ্চয় মোড়লের আনারস প্রতীকের সমর্থক মাদিয়ার চক গ্রামের বিপ্রদাস মন্ডল ও নৃপেন রায়কে রোববার রাত ১১ টার দিকে নৌকা সমর্থকরা হামলা করে মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে। নৌকা সমর্থক প্রনব মৃধা, সনজিত রায়, খগেন্দ্রনাথ গাইন, সঞ্জয় মন্ডল, তরুন ঘরামী, শ্যামল বাইন, কিশোর মন্ডল, পলাশ বর্মন ও গৌরাঙ্গ ঘরামীর নেতৃত্বে দাকোপ সিএমবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় তাদের পথরোধ করে বেধড়ক মারপিট ও মালামাল ছিনতাই করা হয়েছে মর্মে উল্লেখিতদের নামে বিপ্রদাস মন্ডল বাদী হয়ে দাকোপ থানায় এজাহার দাখিল করেছেন।
এছাড়া পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায়ও চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে অনুরূপ হামলা-পাল্টা হামলার খবর পাওয়া গেছে। জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে সেগুলো হল- কয়রার আমাদি, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী। দাকোপের পানখালী, দাকোপ, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, সুতারখালী, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, বাজুয়া ও বানিয়াশান্তা। বটিয়াঘাটার গংগারামপুর, বালিয়াডাঙ্গা, ও আমিরপুর। দিঘলিয়ার গাজীরহাট, বারাকপুর, দিঘলিয়া, সেনহাটি, আড়ংঘাট ও যোগীপোল। পাইকগাছার সোলাদানা, রাড়ুলী, গড়াইখালী, গদাইপুর, চাঁদখালী, দেলুটি, লতা, লস্কর ও কপিলমুনি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৫৬ জন। ৩০৬ টি ওয়ার্ডে মেম্বর প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৪৮১ জন। সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪৬৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারে ইউনিয়নগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন। এদিকে, দাকোপের লাউডোব ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ যুবরাজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ও কয়রা উপজেলার ৫ নং ওয়ার্ডে শেখ সোহরাব আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেম্বর পদে বিজয়ী হয়েছেন। খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার এম মাজহারুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগের দিন ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য উপকরণ পাঠানো হবে। খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে পর্যাপ্ত র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ মোতায়েন থাকবে, নিরাপত্তার কোন ঘাটতি থাকবে না। নির্বাচনে কেউ পেশি শক্তি ব্যবহার করার চেষ্টা করলে কঠোর ভাবে প্রতিহত করা হবে। সকলের সহযোগীতায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।